ফতুল্লা সংবাদদাতাঃ নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুলা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ গডফাদার শামীম ওসমানের অন্যতম সহযোগী নিয়াজ উদ্দীন নামের এক সন্ত্রাসীকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বিকালে ফতুল্লার অক্টোঅফিস এলাকা থেকে নিয়াজ উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে ফতুল্লা মডেল থানার এস আই রোহান। তবে, ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফ জানান, নিয়াজ উদ্দীনকে পুলিশ আটক করেনি তবে সে পুলিশের রেন্জের মধ্যেই ছিল। মামলার আসামি হলেই যাচাই বাচাই বিহীন গ্রেপ্তার করা যাবে না এমন নির্দেশনা হাইকমান্ডের থাকায় মামলার আসামি হলেও আমরা গ্রেপ্তার করতে পারি না। এদিকে গ্রেপ্তারকমত নিয়াজ উদ্দীন আওয়ামী সাংসদ গডফাদার শামীম ওসমানের অন্যতম সহযোগী এবং ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁসহ জেলার বিভিন্ন থানায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামি। অভিযোগ উঠেছে,মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ফতুল্লা মডেল থানার এস আই রোহান আওয়ামী সন্ত্রাসী নিয়াজ উদ্দীনকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেন।
নির্ভরশীল সূত্র জানায়, শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে ইসদাইরের ওসমানী স্টেডিয়াম এলাকা থেকে নিয়াজ উদ্দিন (৫৫) কে আটক করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
ফতুল্লা থানার উপ পরিদর্শক (দারোগা) রোহান অভিযান চালিয়ে সোনারগাঁয়ে হেফাজত কর্মী ইকবাল হত্যা মামলার ২৯ নম্বর এজাহারভূক্ত আসামী নিয়াজ উদ্দিন কে আটক করেব। নিয়াজ উদ্দিন সোনারগাঁ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দূর্ধর্ষ নিয়াজ উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজনি একই সাথে শামীম ওসমানের বন্ধু টিপুর শ্যালক।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, ‘নিয়াজ উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের থানায়ও মামলা রয়েছে। নিয়াজ আমাদের রেঞ্জে ছিল। কিন্তু তাকে হেফাজতে নেওয়া হয় নাই। আমরা তাকে অবজারভেশনে রেখেছি, তাকে হেফাজতে নেয়া হয় নাই। যাচাই-বাছাই না করে যাকে-তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা রয়েছে উধৃধতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ।
এমন হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেপ্তার না করে অবজারভেশনে রাখা যায় কিনা এমন প্রশ্নে ওসি আরো বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।
সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁ থানার দায়ের করা মামলায় ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল এক নারীসহ সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে অবরুদ্ধ হন হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহা সচিব মাওলানা মামুনুল হক। তাকে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী সমর্থকরা। ওই ঘটনায় কেন্দ্র করে সেখানে পুলিশ ও হেফাজত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে আহত হেফাজত কর্মী ইকবাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ৫ আগষ্টে পতনের পর গত ২১ অক্টোবর ইকবালের মৃত্যুর ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় ১৭(১০)২৪ নম্বর) হত্যা মামলা দায়ের করে হেফাজত কর্মী শাহজাহান শিবলী। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য, তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপারসহ ১২৮ জনকে আসামি করা হয়। আর এই মামলার ২৯ নম্বর আসামি নিয়াজ উদ্দিন।
নির্ভরশীল অপর একটি সূত্র জানান, বিকেএমইএ এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আবার ফেরত দেয়ার সেই চিহ্নিত রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহারকারী অপরাধী চক্রই এই আসামীকে গ্রেফতার করায় আবার তারাই গোপনে ২০ লাখ টাকা নিয়ে ভাগাভাগি করে রিয়াজকে ছেড়ে দিতেও সকল কর্মকাণ্ড চালায় এ চিহ্নিতরা।
এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী মো. শাহজাহান শিবলী বলেন, `আমি খবরটি জানতে পেরেছি । এ বিষয়ে অবশ্যই আমি স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি মহোদয় এবং ডিআইজি মহোদয়কে অবহিত করে অভিযোগ দিবো।‘
এমন ঘটনায় জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এমন বিষয় আমার জানা নেই। এই বিষয়ে খোঁজ খবর করা হবে।