প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল আরামবাগের আয়েশার সিদ্দিকা মানহা (৫) নামের দুই বছর চার মাস আগে নিখোঁজ শিশুকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন ।
বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লোকাল এডুকেশন এন্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-লিডো।
আজ (২৪ ডিসেম্বর) সকালে লিডোর প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১৫৭১ নং জিডি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে শিশুটিকে তার অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করেন।
গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মান্ডা এলাকায় দুজন মহিলা আয়েশা নামের আনুমানিক ৫ বছরের একটি শিশুটিকে পেয়ে মুগদা থানায় দিয়ে যায়, শিশুটি কোনো ঠিকানা বলতে পারে না বিধায় মুগদা থানা থেকে লিডোর সহযোগিতা চাইলে লিডোর সমাজকর্মীরা তাকে থানা থেকে ৪৩২ নং জিডির মাধ্যমে উদ্ধার করে সেতুবন্ধন শেল্টার কমলাপুরে সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় প্রদান করে।
লিডোর ট্রানজিশনাল শেল্টার সেতুবন্ধন কমলাপুর শাখার সোশ্যাল মোবিলাইজার মোঃ মাসুদ মাহাতাব জানায়, শিশু আয়েশা কে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার পর শিশুটির থেকে তার ঠিকানা জানতে চাইলে সে কিছু বলতে পারে না। ঠিকানার কথা বললে বলে অনেক দূর তার বাসা। বাবার নাম বলে গাজি মায়ের নাম বলে রুপালি। শিশুটি জানায় বাবা তাকে ভালোবাসে মা তাকে অনেক মারে বকা দেয় বুকের নিচে আগুনের ছেকা দিয়ে পুড়ে দিছে তাঁর মা।
আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার পর শিশুটির পরিবার খোঁজার জন্য লিডোর সমাজকর্মীরা নারায়ণগঞ্জ,ঢাকার বিভিন্ন থানার সাথে যোগাযোগ করে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পত্রিকা গুলোর সাথে যোগাযোগ করে, পত্রিকা গুলোর সাথে যোগাযোগ করে জানা পাওয়া যায় যে,আয়েশা নামের একটা মেয়ে হারিয়ে যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে।
নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটা পত্রিকায় আয়েশা নামের মেয়েটির সন্ধান চেয়ে খবর প্রকাশ করে। সেখানে শিশুটির নিখোঁজের বিস্তারিত লেখা থাকলেও পরিবারের সাথে যোগাযোগের কোনো নাম্বার লেখা ছিল না।
কিন্তু লিডোর সমাজকর্মীরা ২০ – ৩০ জনের কাছে শিশুটির বর্তমান ছবি এবং ২০২২ এর ছবি পাঠায় সবাই বলছেন দুইটি শিশু ই এক কিন্তু বয়সের ব্যবধান।তাই গত ২০ ডিসেম্বর ২৪ তারিখে শিশুটির পরিবারের সন্ধান পাওয়ার জন্য লিডোর সমাজকর্মীরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যায় এবং ২০২২ এর সকল নথিপত্র থেকে শিশুটির জিডির কাগজ বের করে শিশুটির পরিবারের নাম্বার বের করে।
এবং শিশুটির পরিবারের কাছে যাওয়া হয়। শিশুটির পরিবারের সদস্যের সাথে করে লিডোর মুগদা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয় যাতে তারা সরাসরি দেখে শিশুটিকে চিহ্নিত করতে পারে। শিশুটির পরিবার মুগদা থানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এবং প্রবেশন অফিসার নারায়ণগঞ্জের শিশুটির পরিবারের সমস্ত আইনি কাগজ এবং অন্যান্য নথিপত্র জিজ্ঞাবাদ করে নিশ্চিত হয় যে ৯ ডিসেম্বরে উদ্ধারকৃত শিশু আয়েশা ই ৩০ আগস্ট ২০২২ সালে নিখোঁজ শিশু আয়েশা সিদ্দিকা মানহা।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ যাচাই পূর্বক শিশু শিশু মানহা পিতা- হাসান চৌধুরী মাতা- নিপা ।
সাং গোদনাইল আরামবাগ , , থানা- সিদ্ধিরগঞ্জ জেলা- নারায়ণগঞ্জ।তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
শিশুটির পরিবার জানায় আমাদের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা মানহা আজ দুই বছর চার মাস ধরে নিখোঁজ, যখন সে নিখোঁজ হয় তখন তার বয়স ছিল ২ বছর ৮ মাস। আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। পেপার পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ দেই। কিন্তু এতদিন ধরে আমাদের মেয়ের কোনো খোঁজ খবর পাইনি।
আমরা সবাই ভেবে ছিলাম আমাদের সন্তান কে বোধহয় আর ফিরে পাবো না। যখন আমরা লিডো এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি আমাদের মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা নিজের কান কে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। সবাই মিলে আমাদের শিশুকে দেখতে লিডোর কমলাপুর আশ্রয় কেন্দ্রে যাই , আমাদের মেয়েকে বুকে জড়িয়ে আমরা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। শিশুটির পরিবারের দাবি শিশুটি এতদিন যে পরিবারে ছিল আমাদের মেয়ে আয়েশা যে গাজি এবং পারুলের কথা বলে তাদের যেনো প্রশাসন খুঁজে বের করে। আমরা লিডো সংস্থার কাছে চির কৃতজ্ঞ আমাদের মেয়েকে এত বছর পর সুস্থ্য অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
শিশুটির নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন পত্রিকায় যে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয় তা হুবহু নিম্নে দেওয়া হলো।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্বিগঞ্জ থানার আড়াই বছরের শিশু আয়েশা সিদ্দিকা মানহার সন্ধান চায় পরিবার।
গত মঙ্গলবার(আগষ্ট) দুপুর ১২টায় সিদ্বিগঞ্জের ১০ নং ওয়ার্ডের আরামবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় আয়েশা।
নিখোঁজ আয়েশার পিতা সিদ্বিগঞ্জের আরামবাগের জামাল ভূঁইয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া হাসান চৌধুরী(৩২) বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করেন। যার নম্বর ১৫৯৬,তারিখ ৩০/০৮/২০২২। এছাড়াও র্যাব-১১ এর আইনগত সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছে হাসান চৌধুরী।
নিখোঁজ আয়েশার পিতা হাসান জানায়,গত ৩০ আগষ্ট বেলা অনুমান ১২টার সময় আমার একমাত্র মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা মানহা(২ বছর ৮ মাস) বাসার সামনে রাস্তায় খেলা করতেছিল।তার পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরবর্তিতে আয়েশাকে সকল বাড়ী ও সম্ভব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। কিন্তু স্থানীয় লোকজন আমাকে জানায় যে, বৃষ্টি হিজড়া ও তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা হিজড়াগন আয়েশাকে নিয়ে গিয়েছে। আমার মেয়ে ও বৃষ্টি হিজড়াকে সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করিয়াও আমার মেয়ের কোন সন্ধান পাওয়া যায় নাই। এই ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ও র্যাব-১১ এর কাছে সহযোগিতা চেয়েছি।
নিখোঁজ আয়েশা সিদ্দিকা মানহার দেহের বর্ণনা :লম্বা ২’৬” ফুট। গায়ের রং ফর্সা। মুখ মন্ডল গোলাকার। মাথার চুল ফেলানো। পরনে সাদা সেন্টো গেঞ্জি ও সবুজ রংয়ের প্যান্ট।
এলাকাবাসী জানায়,২০১৮ সালে পুলিশের গাফলতির কারনে গোদনাইল প্রাথমিক স্কুলের ৩য় শ্রেনীর শিক্ষার্থী রোকসানা অপহরণ হয়ে ধর্ষণের শিকার মারা যায়। তার লাশ কাইকারটেক ব্রিজের ঢাল থেকে। যার মামলা নং ৫৩, তারিখ ২৭/১/২০১৮।
উল্লেখ্য, লিডো একটি অলাভজনক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা যা শিশু উন্নয়ন ও অধিকার বাস্তবায়নে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ২০০০ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থাটি মূলত পথশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার বিষয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড যেমন- ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা হতে পথশিশুদের উদ্ধার, হারিয়ে যাওয়া শিশুদের পরিবার খুঁজে পরিবারের কাছে হস্তান্তর,পুনর্বাসন, পথস্কুল পরিচালনা, মোবাইল স্কুল পরিচালনা, পথপরিবার ও শিশুদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে আসছে।