ফতুল্লা সংবাদদাতাঃ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামে মরমি সাধক ফকির লালন সাঁই স্মরণে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার’ আয়োজন করেছেন ভক্তরা। তবে এই অনুষ্ঠান বন্ধ করতে একটি মহল হুমকি দিয়েছে। এদিকে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও অনুমতি মেলেনি। ফলে এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে মেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লালন ভক্তরা।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকালে কাশীপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল জানান, বিকাল থেকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ঘরোয়াভাবে দুই দিনব্যাপী ‘সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার’ কার্যক্রম চলবে।
জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ২২ ও ২৩ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজনে থাকবে লালন স্মরণে ভক্তিমূলক গান, লালন সম্পর্কে আলোচনা ও খাবার বিতরণ। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হয়েছেন।
এ বিষয়ে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল বলেন, আমার নিজের জমিতে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে গত ১০ বছর ধরে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালনভক্তরা এই আয়োজনে আসেন এবং লালনের গান চর্চা করেন। এখানে কোনও ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ড হয় না। তবে এবার তৌহিদি জনতার ব্যানারে মেলার কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ডিআইটি মসজিদের খতিব ও হেফাজত নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল। এমনকি মেলা বন্ধ না করলে সবকিছু ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছেন। ফোনে ও নানা লোকের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। হুমকির মুখে মেলার দোকানদার সবাই চলে গেছে। এই অবস্থায় বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছি।
তিনি আরও বলেন, এই বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। প্রতি বছর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে মেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। তবে এবার হেফাজত নেতার হুমকির পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লালন মেলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে ঘরোয়াভাবে আমরা অনুষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পন্ন করবো। শুক্রবার বিকাল থেকে মূল অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হবে।
এর আগে, ১৫ নভেম্বর কাশিপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর ঈদগাহ মাঠে ‘তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে এক দল লোক নিয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল লালন মেলা বন্ধের হুমকি দেন। তার সেই হুমকি দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে বলতে শোনা যায়, লালনের মেলা যদি আপনারা বন্ধ না করেন, আমরা প্রশাসনকে জানাবো, এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। মুসলিম তৌহিদি জনতা অন্যায়ের ব্যাপারে কোনও আপস করতে রাজি না। প্রয়োজেনে তিনি বাধা দেবেন বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
এ হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ইস্যু তুলে তারা বাধা দিয়ে আসছে। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় ও অপরাধমূলক কাজ। আর মাওলানা আব্দুল আউয়াল পলাতক গডফাদার শামীম ওসমানের দালাল ছিলেন। তিনি আলোচনায় আসতে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে লালন মেলা বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, লালন মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর তৌহিদি জনতার হুমকির বিষয়টি জানা নেই।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘরোয়াভাবে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। তারপরও পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।