শহর সংবাদদাতা: আওয়ামী লীগের পুরো শাসনামলে নগরীর ৫নং ঘাটে ছিলো বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার অস্থায়ী কার্যালয়। এতদিন এ কার্যালয়টি ভেঙ্গে ফেলার কোন উদ্যোগই ছিলো না বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের। কারণ, তারা আওয়ামী লীগের লোক ছিলো। কিন্তু যখনই ওই সংগঠনটি বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক নেতাদের নেতৃত্বে চলে এলো তখনই সংগঠনের কার্যালয়টি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হলো। এমনই সব অভিযোগ করতে দেখা গেছে এ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের।
তাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, দীর্ঘ বহুবছর ধরে ৫নং ঘাটে তাদের একটি কার্যালয় ছিলো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক নেতাদের সরিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা সংগঠনটি পরিচালনা করতো। আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় এতদিন এ কার্যালয় নিয়ে কারো কোন অভিযোগ ছিলো না।
তারা বলেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ওই আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে যায়। ফলে সংগঠনের নেতৃত্বে সেই পুরনো শ্রমিক নেতারা চলে আসে। আর বিএনপি সমর্থিত সেই পুরনো শ্রমিক নেতারা চলে আসার পরও গাত্রদাহ শুরু হয় বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখনও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে রয়ে গেছে তাদের কিছু দোসর। ওই আমলারূপি দোসরা যেভাবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে অর্জিত নতুন এ স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারছেন না, তেমনি একইভাবে বিএনপির নেতৃত্বকেও তারা মেনে নিতে পারছেন না। আর তারইতো কারণে অকারণে তাদের ক্ষোভের শিকার হচ্ছে আমাদের মত বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনগুলো। যারফলে রাতের আধারে আমাদের কার্যালয়টি ভেঙ্গে ফেলা হয়। আমরা অবিলম্বে এসমস্ত দোসরদের সকল সরকারি দপ্তর থেকে অপসারণ চাই।
এদিকে কার্যালয়টি ভেঙ্গে ফেলায় শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তারা এর প্রতিবাদে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ৫নং ঘাটে ভেঙ্গে ফেলা সংগঠনটির কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন বলেন, আমরা শ্রমিক সংগঠনের সকল কার্যক্রম এ কার্যালয় থেকে চালাতাম। এখান থেকে আমরা শ্রমিক ও বিএনপির সকল মিটিং মিছিল এ কার্যালয় থেকে পরিচালনা করতাম। কিন্তু বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর পোর্ট অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান রাগান্বিত হয়ে আমাদের কার্যালয়টি ভেঙ্গে দিয়েছে। আজ শুধু বিএনপি কার্যক্রম চলার কারণে তিনি এ অফিসটি ভেঙ্গে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলেও আজমেরী ওসমানের দোসর শিবলি বাবু এখনও ঘাট দখল করে খাচ্ছে। তারা এখনও বিআইডব্লিউটিসিকে জিম্মি করে রেখেছে। এ মাছঘাটে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার টেন্ডার। এ টেন্ডারের এককালিন টাকা না দিয়ে পোর্ট অফিসের সাথে যোগসাজসে হাইকোর্টে একটি মামলা দিয়ে প্রতিমাসে পোর্ট অফিসার ৫ লক্ষ টাকা করে নেয়। শুধু তাই নয়, মাছকাটে যে বটিওয়ালা, তাদের কাছ থেকেও ৫০ লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়েছে ইজারাদার শিবলি বাবু। এটা মিথ্যা হলে আমার বিচার আপনারা জনতারা করবেন। এ বিষয়গুলো তদন্ত করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নৌ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করে এ নেতা।
তিনি বলেন, এসবের প্রতিবাদ করার কারণে রাতে আধারে (সন্ধ্যায়) আজকে আমাদের কার্যালয় ভেঙ্গে দিয়েছে। এখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি ছিলো, ওই ছবিগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পোর্ট অফিসার মোস্তাফিজুর ঘুষের মাধ্যমে আজ লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন। আমরা ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। যদি এর মধ্যে আমাদের অফিসের ঘামগুলো পুনরায় স্থাপন করে না দেয়া হয়, তাহলে সারা বাংলাদেশে আমরা নৌ ধর্মঘটে যেতে আমরা বাধ্য হবো।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি আব্বাস আলী বাবুল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান রিপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আক্তার হোসেন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো: লিটন, বন্দর ঢাকেশ^রি শাখার সভাপতি নাসির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো: মহসীন, মদনগঞ্জ শান্তিনগর শাখার সহ সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক মো: মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, মহিদুর রহমান, জুবায়ের প্রমূখ।
এদিকে এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম পরিচালন (বন্দর ও পরিবহন) মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিআইডব্লিউটিসির জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিলো, যেটা আমাদের প্রধান দপ্তর পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কোন পারমিশন ছাড়া এভাবে সরকারি জায়গায় কোন স্থাপনা তৈরি করার আইনত বৈধতা কারোরই নাই। সেজন্য আমরা থামিয়ে দিয়েছি। আমাদের লোকজন অবৈধ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত খামগুলো ভেঙ্গে দিয়েছে।
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আপনি আমার জায়গায় ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে অবৈধ স্থাপনা বানাবেন, এটা কি আমি সরাতে পারবো না।