আফছার,চট্টগ্রাম সংবাদাতাঃ ৯০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কালুরঘাট সেতু, যা ১৯৩১ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল, অবশেষে আবারও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ থাকার পর রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সেতুটিতে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। এই উদ্যোগে বোয়ালখালীসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত যোগাযোগের সুবিধা ফিরিয়ে আসছে।
২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই সংস্কার কাজ প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বুয়েটের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল ২৪ সেপ্টেম্বর সেতুর সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে যান চলাচলের জন্য সেতুটি চালু করার সুপারিশ করেন। সেতুর সড়কপথের সংস্কার, রেলপথের কার্পেটিং এবং ওয়াকওয়ে স্থাপনের মাধ্যমে এটি পুণরায় ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। সেতুর পিয়ারগুলোকে মজবুত করার জন্য নদীর পানির নিচে প্রায় ৬০ হাজার জিও ব্যাগের মাধ্যমে বালি ভরাট করা হয়েছে, যা সেতুর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে।
যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত রাখার পাশাপাশি, আপাতত এই রুটে কোনো টোল আরোপ করা হয়নি। তবে শুধুমাত্র ৮ ফুট উচ্চতার নিচের ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারবে; বড় ট্রাক ও বাসের মতো ভারী যানবাহনের চলাচল এই সেতু দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম জানান, ভূ-সম্পত্তি বিভাগ শিগগিরই টোল আদায়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করবে।
সংস্কারের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান জানান, সকল কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে এবং রবিবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া, বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী, রাতে সেতুতে যান চলাচলে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য বিভিন্ন পয়েন্টে লাইট রিফ্লেকটিং রং ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেলপথ প্রকল্পের সমাপ্তির পরও নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় পুরাতন কালুরঘাট সেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে এই সেতু দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন ও দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য জ্বালানীবাহী ট্রেন চলাচল করে। তবে ভবিষ্যতে, বিশেষত নতুন সেতু নির্মাণের পর, এই রুটে দৈনিক ২৩ জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে রেলওয়ের নতুন ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে কক্সবাজার রুটে আরও কিছু ট্রেন যুক্ত করার পরিকল্পনা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিয়েছে।
সংস্কার কাজের মাধ্যমে কালুরঘাট সেতুর দীর্ঘস্থায়ী সমাধান ও নতুন নকশার কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় হবে। এই সেতুর পুনঃসংস্কারের ফলে পর্যটন শিল্প, ব্যবসা এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।