শহর সংবাদাতাঃ সাভার-আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ১২ বছর পূর্তিতে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণঞ্জ জেলার উদ্যোগে রবিবার বিকাল ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সহসভাপতি হাসনাত কবীর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সহসভাপতি আনোয়ার খান, গাবতলী-পুলিশ লাইন শিল্পাঞ্চল শাখার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভার-আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে ১১৩ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এরপর ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালে সাভারে রানাপ্লাজা ধ্বসে ১১৩৬ জন মৃতুবরণ করে। এ মৃত্যুর মিছিল এখনও চলছে। ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় ৫৪ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করে। এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটছে, শ্রমিক মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন মালিকের শাস্তি হয়নি। তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধস, বয়লার বিষ্ফোরণসহ এসব ঘটনার জন্য দায়ী মালিকের অতিমুনাফার লোভ। কারখানাগুলো আইন মানে না, নিরাপত্তার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা করে না। তারপরও মালিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয় না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক সংগঠনগুলোর দীর্ঘ দিনের দাবি আইএলও কনভেনশন ১২১ এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫ অনুযায়ী কর্মরত শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা গেলে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দেয়া। কিন্তু আমাদের শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণ মাত্র ২ লাখ টাকা। তাজরীন, রানাপ্লাজা, সেজান জুস এর মতো ঘটনা বন্ধ করতে হলে মালিককে সর্বোচ্চ শাস্তি ও আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণের বিধান করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারকে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা জীবন দিয়ে হটিয়েছে। ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের পর অর্ন্তবর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এ সরকারের দায়িত্ব ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই এখনও কারখানাগুলোতে চলছে ব্যাপক শ্রমিক ছাঁটাই, প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে দেয়া, এখনও অনেক গার্মেন্টসে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এবিষয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে স্বৈরাচারী সরকারের সময়ের মতো করেই মালিকরা বলে শ্রমিক নেতারা উস্কানি দিচ্ছে, শ্রমিক নেতারা ভারতের চর হিসাবে কাজ করছে। প্রত্যেক কারখানায় শ্রমিকের ন্যায্য দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করার জন্য মালিকদের মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের নিরাপত্তা, আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান, তাজরীনসহ বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসে শ্রমিক হত্যার জন্য মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।